পঞ্চগড় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি জেলা। এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা। এটি ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে একটি জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পঞ্চগড় বাংলাদেশের চরম উত্তরে অবস্থিত, এবং তিন দিকে প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার (১৭৯ মাইল প্রায়) দীর্ঘ ভারতীয় সীমান্ত দ্বারা আবদ্ধ, উত্তরে দার্জিলিং জেলা, উত্তর-পূর্বে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা, পশ্চিমে উত্তর দিনাজপুর।
পঞ্চগড় জেলার প্রধান নদীগুলি হল মহানন্দা, আত্রাই এবং তিস্তা। মাটি উর্বর এবং প্রধান ফসল হল ধান, পাট, গম এবং ভুট্টা। জেলার প্রধান শিল্পগুলি হল কৃষি, বনায়ন এবং পর্যটন। প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হল পঞ্চগড় দুর্গ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পার্ক এবং কমলাবাড়ি মন্দির। এর প্রধান নৃ-গোষ্ঠী হল বাঙালি, রাজবংশী, ও সাঁওতাল। কথ্য প্রধান ভাষা হল বাংলা ও রাজবংশী। পঞ্চগড় অনেক সম্ভাবনাময় একটি উন্নয়নশীল জেলা। এটি একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত এবং অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।
পঞ্চগড় নামকরণ ও জেলার ইতিহাস
পঞ্চগড় জেলার নামের সাথে দুটি প্রধান বিশ্বাস জড়িত। প্রথমটি হল পুন্ডু নগর রাজ্যের পঞ্চ নগরী নামক একটি এলাকার নামানুসারে পঞ্চগড়ের নামকরণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়টি হল এই অঞ্চলের পাঁচটি দুর্গের (বা গড়) জন্য এর নামকরণ করা হয়েছিল। দুর্গগুলি ছিল ভিতরগড়, হোসাইনগড়, মীরগড়, রাজনগড় এবং দেবেনগড়, তাই পঞ্চগড় নামকরণ করা হয়েছে যার অর্থ 'পাঁচটি দুর্গ'।
পঞ্চগড়ের প্রথম নথিভুক্ত উল্লেখ ১৬ শতকে যখন এটি মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘলরা এই অঞ্চলে ভিতরগড়, হোসাইনগড় এবং মিরগড় সহ বেশ কয়েকটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল। ১৮ শতকে পঞ্চগড় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা জয় করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা রাজনগড় ও দেবেনগড় সহ এই অঞ্চলে দুর্গ নির্মাণ অব্যাহত রাখে।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পঞ্চগড় পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়। ১৯৮০ সালে পঞ্চগড় একটি জেলার মর্যাদা উন্নীত হয়। আজ পঞ্চগড় একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধ জেলা।
পঞ্চগড় জেলার উপজেলা/থানা সমূহ
পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে ৫টি থানা/উপজেলা। যা হল:
- পঞ্চগড় সদর উপজেলা,
- আটোয়ারী উপজেলা,
- বোদা উপজেলা,
- দেবীগঞ্জ উপজেলা,
- তেতুলিয়া উপজেলা।
পঞ্চগড় জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
এখানে পঞ্চগড় জেলার কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র/দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:
বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট
এটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সীমান্ত পয়েন্ট। এটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক তাত্পর্যের জন্য একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
পঞ্চগড় জিরো পয়েন্ট
এটি পঞ্চগড় শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ভিউ পয়েন্ট। এটি আশেপাশের পাহাড় এবং উপত্যকার প্যানোরামিক দৃশ্য সরবরাহ করে।
তেতুলিয়া চা বাগান
এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চা বাগানগুলোর একটি। এটি পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত।
মোহনপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
এটি পঞ্চগড় জেলার মোহনপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এটি হরিণ, বাঘ এবং হাতি সহ বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর বাসস্থান।
আটোয়ারী কেল্লা
এটি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় অবস্থিত একটি পুরাতন দুর্গ। এটি সপ্তাদশ শতকে মুঘলদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
পঞ্চগড় জেলার পাহাড়পুর উপজেলায় অবস্থিত এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। এটি ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।
সদরহাট মসজিদ
এটি পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি মসজিদ এটি সপ্তাদশ শতকের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।
ভিতরার শালমারা
এটি পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি হ্রদ। বোটিং, মাছ ধরার জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্পট।
পঞ্চগড় জেলার পাবলিক পার্ক সমূহ
পঞ্চগড় জেলার কিছু পাবলিক পার্ক এর মধ্যে যেগুলো অন্যতম:
শেরে বাংলা পার্ক
পঞ্চগড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পার্ক এটি। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং স্থানীয় এবং পর্যটকদের কাছে একইভাবে একটি জনপ্রিয় স্থান। পার্কটিতে একটি খেলার মাঠ, একটি সুইমিং পুল, একটি মসজিদ এবং একটি হিন্দু মন্দির সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।
পঞ্চগড় সিটি পার্ক
এই পার্কটি পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের কাছে অবস্থিত। এটি শেরে বাংলা পার্কের তুলনায় একটি ছোট পার্ক, তবে এটি এখনও স্থানীয়দের কাছে বিশ্রাম নেওয়ার এবং তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।
ভাঙ্গা বন পার্ক
পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে এই পার্কটি অবস্থিত। এটি বিভিন্ন গাছ এবং ফুলের একটি বড় পার্ক। পার্কটি পিকনিক এবং হাইকিংয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
উত্তর বাংলা পার্ক
এই পার্কটি ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি একটি খেলার মাঠ এবং সুইমিং পুল সহ একটি ছোট পার্ক। পার্কটি স্থানীয়দের জন্য তাদের পরিবারের সাথে আরাম এবং সময় কাটানোর জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
যে কারনে পঞ্চগড় জেলা বিখ্যাত
পঞ্চগড় জেলা অনেক কিছুর জন্য বিখ্যাত, যার মধ্যে কিছু রয়েছে:
- এর চা শিল্প: পঞ্চগড় বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী জেলা এবং চা শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
- ভারতের সাথে এর নৈকট্য: পঞ্চগড় বাংলাদেশের চরম উত্তরে অবস্থিত, এবং এটি ভারতের সাথে একটি দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। এটি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ও পর্যটনের জন্য এটিকে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য করে তোলে।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: পঞ্চগড় বন, নদী এবং হ্রদ সহ অনেকগুলি প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল।
- ঐতিহাসিক গুরুত্ব: পঞ্চগড় একসময় কামরূপের প্রাচীন রাজ্যের অংশ ছিল, এবং এর একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা বহু শতাব্দী আগেকার৷
পঞ্চগড় জেলাকে বিখ্যাত করে তোলেছে এমন আরও কিছু আকর্ষণ এখানে তুলে ধরা হল:
- বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর: এই স্থল বন্দরটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত, এবং এটি নেপাল ট্রানজিট ট্রাফিকের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পঞ্চগড় সদর মহারাজার দীঘি (পুকুর): এই পুকুরটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ, এবং এটি একটি প্রাক্তন রাজার ভূত দ্বারা ভূতুড়ে বলে কথিত আছে।
- ভিতরর শালমারা: এই হ্রদ মাছ ধরা এবং নৌকা বিহারের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান।
- ভিতরগড়ের শাল বন: এই বন বাঘ, হাতি এবং হরিণ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
- চাওয়াই এবং কারাতোয়া নদীর তীরে সরকারি বন: এই বনে বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং গাছপালা রয়েছে এবং এগুলি হাইকিং এবং ক্যাম্পিং করার জন্য একটি জনপ্রিয় জায়গা।
পঞ্চগড় জেলা একটি চিত্তাকর্ষক এবং বৈচিত্র্যময় স্থান।