টাঙ্গাইল বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি শহর, যা দেশের রাজধানী ঢাকার প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত যা সিল্ক এবং তুলা থেকে বোনা হয়। এটি আয়তনের দিক থেকে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা (ঢাকা জেলার পরে)। জেলার প্রধান শহর টাঙ্গাইল। এর উত্তরে জামালপুর জেলা, দক্ষিণে ঢাকা ও মানিকগঞ্জ জেলা, পূর্বে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এবং পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা দ্বারা বেষ্টিত।
টাঙ্গাইলের মহকুমা ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ১৯৬৯ সালের ১ ডিসেম্বরে একটি জেলায় রূপান্তরিত হয়। টাঙ্গাইল একটি সুন্দর এবং প্রাণবন্ত জেলা যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য অনেক কিছু রয়েছে। আপনি যদি বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশ্রাম, অন্বেষণ এবং শেখার জায়গা খুঁজছেন, টাঙ্গাইল একটি দুর্দান্ত বিকল্প।
টাঙ্গাইল জেলার নামকরণের ইতিহাস
টাঙ্গাইল জেলার নামকরণ করা হয়েছে বাংলা শব্দ "টাঙ্গা" থেকে, যার অর্থ "ঘোড়ার গাড়ি"। ১৯ শতকের শুরুর দিকে ঘোড়ার গাড়ির দীর্ঘ লাইন এই এলাকায় মানসম্মত ছিল কারণ এইগুলি যাত্রী এবং পণ্যসম্ভারের জন্য পছন্দের মাধ্যম ছিল। ১৯ শতকের শুরু থেকেই টাঙ্গাইল একটি স্থানীয় ব্যবসা কেন্দ্র। ১৮৬০ সালে লৌহজং নদীর কাছে উর্বর জমির কারণে টাঙ্গাইল বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার চতুর্থ র্যাঙ্কিং এলাকায় পরিণত হয়। এটি ছিল বেগুন বাড়ি, ময়মনসিংহের কাছে। ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
"টাঙ্গাইল" নামটি বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কিন্তু ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত এটি জেলার সরকারী নাম হয়ে ওঠেনি। নামটি ঘোড়ার গাড়ির দীর্ঘ লাইনের একটি রেফারেন্স যা একসময় এলাকায় প্রচলিত ছিল। এই কার্টগুলি যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হত এবং তারা স্থানীয় ব্যবসা কেন্দ্র হিসাবে টাঙ্গাইলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বর্তমানে, টাঙ্গাইল একটি সমৃদ্ধ জেলা। এটি একটি প্রধান কৃষি উৎপাদনকারী এবং এটি টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থল। টাঙ্গাইল একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি ঐতিহাসিক স্থান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য পরিচিত।
টাঙ্গাইল জেলার উপজেলা/থানা গুলো
টাঙ্গাইল জেলায় মোট ১২ টি থানা/উপজেলা রয়েছে যা হলো:
- বাসাইল উপজেলা,
- ভুঞাপুর উপজেলা,
- দেলদুয়ার উপজেলা,
- ঘাটাইল উপজেলা,
- গোপালপুর উপজেলা,
- মধুপুর উপজেলা,
- মির্জাপুর উপজেলা,
- নাগরপুর উপজেলা,
- সখীপুর উপজেলা,
- টাঙ্গাইল সদর উপজেলা,
- কালিহাতী উপজেলা,
- ধনবাড়ী উপজেলা।
টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো
যমুনা সেতু
মহেরা জমিদার বাড়ি
আতিয়া জামে মসজিদ
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
ধনবাড়ী নবাব প্রাসাদ
টাঙ্গাইল সদর পার্ক
ঘোপড়া হ্রদ
টাঙ্গাইল জাদুঘর
সাগর দীঘি
ইছামতি দীঘি
নাগরপুর দীঘি
খামারপাড়া মসজিদ
ধনবাড়ী মসজিদ
টাঙ্গাইল জেলার পাবলিক পার্ক সমূহ
টাঙ্গাইল পৌর উদ্যান
এসপি পার্ক
সোল পার্ক
যে কারণে টাঙ্গাইল জেলা বিখ্যাত
- টাঙ্গাইলের শাড়ি: টাঙ্গাইল তার তাঁতের শাড়ির জন্য বিখ্যাত, যা সুতি এবং সিল্ক উভয়ই দিয়ে তৈরি। এই শাড়িগুলি সারা বিশ্বে বসবাসকারী বাংলাদেশী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী ও মেয়েরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
- টাঙ্গাইলের চমচম: টাঙ্গাইলের চমচম সারা বাংলাদেশে পরিচিত, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই চমচমের স্বাদ নিতে টাঙ্গাইল আসে।
- মধুপুর জাতীয় উদ্যান: এটি টাঙ্গাইল জেলার দক্ষিণে অবস্থিত একটি পাহাড়ি রেইনফরেস্ট। এটি বাঘ, হাতি, হরিণ এবং বানর সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
- যমুনা সেতু: যমুনা সেতু একটি ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু যা যমুনা নদীর উপর বিস্তৃত। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুগুলির একটি এবং এটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সংযোগ।
- আতিয়া জামে মসজিদ: আতিয়া জামে মসজিদ দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত একটি ৪০০ বছরের পুরনো মসজিদ। এটি মুঘল স্থাপত্যের একটি সুন্দর উদাহরণ।
- সন্তোষ: সন্তোষ টাঙ্গাইল জেলার একটি গ্রাম যেখানে স্বাধীনতার নেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর বাড়ি ছিল। এটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।