নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত, এবং বগুড়া, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ জেলাগুলির সাথে সীমান্তবর্তী। এই জেলাটির সদর দপ্তর নওগাঁ শহর। জেলাটি একটি উর্বর ভূমি বিশিষ্ট কৃষি উপযোগী জেলা, এবং এর প্রধান ফসল ধান, গম, পাট এবং আখ। এই জেলাটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সোমাপুরা মহাবিহার সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানের আবাসস্থল।
নওগাঁ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল জেলা এবং এর অর্থনীতি স্থিতিশীল গতিতে বাড়ছে। জেলাটিতে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থল। নওগাঁও একটি প্রধান পরিবহন হাব, এবং অনেকগুলি মহাসড়ক ও রেলপথ দ্বারা পরিসেবা দেওয়া হয়।
নওগাঁ একটি প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় জেলা, এবং এর মানুষ তাদের উষ্ণতা এবং আতিথেয়তার জন্য পরিচিত। জেলাটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এর আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এর ঐতিহাসিক স্থান এবং এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
নওগাঁ জেলার ইতিহাস
বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার নাম বছরের পর বছর কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে। এই অঞ্চলে অবস্থিত বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহারের নামানুসারে জেলাটিকে মূলত "পাহাড়পুর" বলা হত। ১৮৭৭ সালে, নওগাঁ শহরের নামানুসারে জেলার নাম পরিবর্তন করে "নওগাঁ" রাখা হয়, যা জেলা সদর। "নওগাঁ" নামটি বাংলা শব্দ "নাও" (অর্থ "নয়") এবং "গাঁও" (অর্থ "গ্রাম") থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং এটি বিশ্বাস করা হয় যে শহরটি মূলত নয়টি গ্রামের একটি গুচ্ছ থেকে গড়ে উঠেছে।
১৯৮৪ সালে, নওগাঁ জেলা একটি বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত হয় এবং এটি এখন বাংলাদেশের ১৪টি বিভাগের মধ্যে একটি। জেলাটি দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এবং এটি জয়পুরহাট, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী এবং নবাবগঞ্জ জেলার সীমানা ঘেঁষা।
নওগাঁ জেলার থানা/উপজেলা সমূহ
নওগাঁ জেলাটিকে মোট ১১ টি থানা/উপজেলাতে ভাগ করা হয়েছে যা হলো:
- মহাদেবপুর উপজেলা,
- বদলগাছী উপজেলা,
- পত্নিতলা উপজেলা,
- ধামইরহাট উপজেলা,
- নিয়ামতপুর উপজেলা,
- মান্দা উপজেলা,
- আত্রাই উপজেলা,
- রাণীনগর উপজেলা,
- নওগাঁ সদর উপজেলা,
- পোরশা উপজেলা,
- সাপাহার উপজেলা।
নওগাঁ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা। এটি রাজশাহী বিভাগের অধীনে। এই জেলাটি অনেক ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক স্থানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসস্থল। নওগাঁর জনপ্রিয় কিছু পর্যটন আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে:
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। এটি ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
কুসুম্বা মসজিদ
এই মসজিদটি নওগাঁর মান্দা উপজেলায় অবস্থিত। এটি ১৬ শতকে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ।
বলিহার রাজবাড়ি
এটি একটি রাজকীয় প্রাসাদ যা ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এটি নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত।
গাজা সোসাইটি অফিস
এই অফিসটি বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইসলামিক পণ্ডিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত।
বিজয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ
এই স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছিল। এটি নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত।
দুবলহাটি রয়্যাল প্যালেস
এই প্রাসাদটি ১৮ শতকে নির্মিত হয়েছিল। নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি গ্রামে এর অবস্থান।
দিবর দীঘি
এটি একটি বড় পুকুর যা নওগাঁ সদর উপজেলার দিবর গ্রামে অবস্থিত। মাছ ধরা এবং বোটিং এর জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্থান।
জগদ্দল বিহার
এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার যা নওগাঁ সদর উপজেলার জগদ্দল গ্রামে অবস্থিত।
আলতা দিঘী জাতীয় উদ্যান
এটি একটি জাতীয় উদ্যান যা নওগাঁ সদর উপজেলার আলতা দীঘি গ্রামে অবস্থিত। এটি বিভিন্ন প্রাণী এবং উদ্ভিদের আবাসস্থল।
পতিসর কুঠি বাড়ি
এটি একটি বাড়ি যা ১৯ শতকে নির্মিত হয়েছিল। এটি নওগাঁ সদর উপজেলার পতিসর গ্রামে অবস্থিত। এটি এখন একটি যাদুঘর যেখানে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির একটি সংগ্রহ রয়েছে।
নওগাঁ জেলা পার্ক/উদ্যান
নওগাঁ জেলা উদ্যান বাংলাদেশের নওগাঁ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি পাবলিক পার্ক। এটি ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। পার্কটি ২.৪৬ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং নওগাঁ জেলা পরিষদ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
পার্কটিতে একটি পুকুর একটি লাইব্রেরি এবং বেশ কয়েকটি হাঁটার পথ সহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ পুকুরটি বিভিন্ন ধরণের মাছের আবাসস্থল এবং লাইব্রেরিতে বই এবং সংবাদপত্রের সংগ্রহ রয়েছে। হাঁটার পথগুলো জগার ও ওয়াকারদের কাছে জনপ্রিয়।
পার্কটি সব বয়সের মানুষের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান। এটি বিশ্রাম এবং বাইরে উপভোগ করার জন্য একটি চমৎকার জায়গা। পার্কটি অনুষ্ঠান এবং সমাবেশের জন্যও একটি জনপ্রিয় স্থান।
যে কারনে নওগাঁ জেলা বিখ্যাত
নওগাঁ বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত, যার মধ্যে কিছু রয়েছে:
- সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি: নওগাঁ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সোমপুর মহাবিহার সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানের আবাসস্থল। জেলাটি বেশ কয়েকটি উত্সব এবং মেলার আবাসস্থল, যা সারা বাংলাদেশ থেকে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।
- উর্বর জমি এবং কৃষি উৎপাদন: উর্বর জমি এবং কৃষি উৎপাদনের কারণে নওগাঁকে "বাংলাদেশের রুটির বাস্কেট" বলা হয়। জেলাটি ধান, আম এবং অন্যান্য ফসলের প্রধান উৎপাদক।
- কৌশলগত অবস্থান: নওগাঁ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত, এটি একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থলও এই জেলায়।
- মানুষ: নওগাঁর মানুষ তাদের আতিথেয়তা ও উষ্ণতার জন্য পরিচিত। জেলাটি সারা বাংলাদেশের পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য।
নওগাঁ বিখ্যাত হওয়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ এখানে দেওয়া হল:
- সোমপুর মহাবিহার: সোমপুর মহাবিহার নওগাঁ জেলায় অবস্থিত একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহারগুলির মধ্যে একটি এবং এটি একসময় শিক্ষা ও সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল।
- পাহাড়পুর: পাহাড়পুর নওগাঁ জেলার একটি ছোট শহর যেখানে সোমপুর মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ধ্বংসাবশেষ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে বিবেচিত।
- আম: নওগাঁ তার আমের জন্য পরিচিত, যা বিশ্বের সেরা কয়েকটি। জেলাটি ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগর এবং বোম্বাই সহ বিভিন্ন ধরণের আম উৎপাদন করে।
- চাল: নওগাঁ একটি প্রধান ধান উৎপাদনকারী এবং "বাংলাদেশের রুটির ঝুড়ি" হিসাবে পরিচিত। এ জেলায় আউশ, আমন, বোরোসহ বিভিন্ন ধরনের ধান উৎপন্ন হয়।